ভারতের জিআই স্বীকৃতি বাতিলের দাবি, টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব নিয়ে ফুসে ওঠছে জেলাবাসী - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    ভারতের জিআই স্বীকৃতি বাতিলের দাবি, টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব নিয়ে ফুসে ওঠছে জেলাবাসী

     রাইসুল ইসলাম লিটন, 


    টাঙ্গাইল  ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের দাবি করে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি নেওয়ায় প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুসে ওঠছে জেলাবাসী। দ্রুত ভারতের জিআই বাতিল করে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’কে জিআই স্বীকৃতির দাবি করেছে জেলার  ব্যবসায়ী ও সুধীজনরা।
    টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব নিয়ে ফুসে ওঠছে জেলাবাসী



    ভারতের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে বৃহস্পতিবার(১ ফেব্রুয়ারি) করা একটি পোস্টে বলা হয়- ‘টাঙ্গাইল শাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত, একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস।

    এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রং এবং সূ² জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্য্যরে মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’ এরপর থেকে টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জেলা সদর সহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

    টাঙ্গাইলের সচেতন মহল ইতোমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এ বিষয়ে জরুরি সভা করে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

    টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতির দাবিতে শনিবার (৩
    ফেব্রুয়ারি) বিকালে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’- এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

    মানববন্ধনকারীরা ‘টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য’, ‘নদী-চর খাল-বিল গজারির বন, টাঙ্গাইলের শাড়ি তার গরবের ধন’,‘আমার ঐতিহ্য, আমার অহঙ্কার’, ‘টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ির জিআই স্বীকৃতি চাই’- ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়ান। ওই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুঈদ হাসান তড়িৎ, আরিফুজ্জামান সোহেল, সমাজকর্মী নাজিউর রহমান আকাশ, মির্জা রিয়ান, আহসান খান মিলন, স্মরণ ইসলাম প্রমুখ।

    বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের বিখ্যাত শাড়ি। ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল পেজে এই টাঙ্গাইল শাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস বলা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের জরুরি
    হস্তক্ষেপ কামনা করি।

    সরেজমিনে টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে জড়িতরা জানায়, প্রায় ২০০ বছর ধরে ইতিহাস
    ঐতিহ্যের ধারক-বাহক টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি। যা নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া ‘নদী-চর খাল-বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন’ এ গানের আলোকেই টাঙ্গাইলের মানুষের জীবনাচরণ চলমান। টাঙ্গাইল শাড়ি সদর উপজেলার বাজিতপুর, কৃষ্ণপুর, দেলদুয়ারের পাথরাইল, কালিহাতীর বল্লা, রামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়। তবে দেলদুয়ারের পাথরাইল টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত।

    বল্লা এলাকা সুতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তফা আশরাফী ও সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান হাসান ভারতের কড়া সমালোচনা করে জানান, প্রায় আড়াইশ’ ছরের  ঐতিহ্য টাঙ্গাইল শাড়ি। এ শাড়ি টাঙ্গাইলেই অসাধারণ কারুকার্য ও সুনিপুনতায় অত্যন্ত দরদ দিয়ে তৈরি করা হয়। টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব শুধুমাত্র টাঙ্গাইলের তাঁতিদের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক(জিআই) স্বীকৃতি দিয়ে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব ছিনতাই করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।

    টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী খ্যাত পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, টাঙ্গাইল শাড়ি বলতে টাঙ্গাইলকেই বোঝায়। টাঙ্গাইলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ভিন্ন মান ও ভিন্ন দক্ষতায় টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হয়। এই দক্ষতায় অন্য জায়গায় শাড়ি তৈরি হলেও সেটা টাঙ্গাইল শাড়ি না। অন্যরা টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজের দাবি করে জিআই ট্যাগ নেওয়া- এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।

    টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক কবি মাহমুদ কামাল জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা টাঙ্গাইল। কয়েকশ’ বছর আগে থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি পৃথিবী বিখ্যাত। 

     শাড়ির অন্য দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ওই দেশের জিআই স্বীকৃতি বাতিল করে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান তিনি।

    টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ আর্টিজেন্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড এবং বল্লা এলাকা তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম
    জানান, প্রাচীণকাল থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁতিদের সু² দক্ষতায় সুনিপুনভাবে তৈরি হচ্ছে। 

    ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দেশভাগের পর টাঙ্গাইলের তাঁতিদের কেউ কেউ ভারতে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। সেখানেই তারা আদি পেশা ‘তাঁত শিল্পের’ কাজ করছে। তাই বলে টাঙ্গাইল শাড়ি কখনোই সেদেশের হতে পারেনা। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের জোরে টাঙ্গাইল শাড়ি দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। যারা ওই দেশে রয়েছে- তারাও শাড়ি তৈরি করে
    জীবিকা নির্বাহ করছে- এটা যেমন সত্য, তেমনি টাঙ্গাইল শাড়ি টাঙ্গাইলেরই সম্পত্তি- এটাও ধ্রুব সত্য। তিনি ওই দেশের জিআই স্বীকৃতি বাতিল করে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান।

    টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল শাড়ি, মধুপুরের আনারস ও জামুর্কির সন্দেশ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এটা যে এখানকার অর্জন, সেটার ৫০ বছরের সুদীর্ঘ

    ধারাবাহিকতা দিতে হয়। অথচ টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি আড়াইশ’ বছরের পুরাতন। টাঙ্গাইল শাড়ি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া ২০১৭ সালে টাঙ্গাইল শাড়ি সরকার কর্তৃক ব্র্যান্ডিং হয়েছে।

    তিনি আরও জানান, ভারত যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে, তারা ডকুমেন্টেশনে উল্লেখ করেছে- পাথরাইলের বসাক পরিবারের আদি পুরুষরা সেখানে গিয়ে তাঁত শাড়ির পাড়ের ডিজাইন চেঞ্জ করে একটা ভিন্ন প্রকার উদ্ভাবন করেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্টাডি করা শুরু হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা করেছেন। মন্ত্রণালয় টু মন্ত্রণালয় কথা বলে এ বিষয়ে কিভাবে আবেদন করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও আপিল করার সুযোগ থাকলে সে বিষয়েও কথা বলা হবে।


    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728