কোরবানির বাজার কাপাবে টাঙ্গাইলের বস, মানিক ও সাদা বাহার
রাইসুল ইসলাম লিটন :
এক
সপ্তাহ পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ইদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এই
কোরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে শেষ গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন
খামারিরা। অনলাইন ও স্থানীয় বাজারে কোরবানির পশুর দাম যাছাই করছে ক্রেতারা।
খাদ্যের দাম বৃদ্ধিও কারনে গরুর দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে খামারীরা।
জেলায়
চাহিদার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা
প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য, টাঙ্গাইলের বস, মানিক,
সাদা বাহার, বাহাদুর। এসব ষাড় গরুর ওজন ২৫ থেকে ৫২ মণের মধ্যে। দাম চাওয়া
হচ্ছে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, আসন্ন ঈদে কোরবানি পশুর প্রস্তুত এক লাখ ৯১ হাজার ৭১৫টি। তার মধ্যে ৭১ হাজার ৫৬০টি গরু ও এক লাখ ২০ হাজার ১শ ৫৫টি ছাগল রয়েছে। জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজারে কিছুটা বেশি। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪১ হাজার ৭১৫টি গবাদি পশু। একটু বেশি মুনাফার আশা সারা বছর পরিশ্রম করে অতি যত্মে এসব পশু লাল পালন করেছে প্রান্তিক খামারিরা। প্রত্যেক খামারি তাদের প্রিয় পশুটি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করতে শেষ বেলায় ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন।
দেলদুয়ার
উপজেলার ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কলেজ ছাত্রী হামিদা ছয় বছর যাবত অস্ট্রিলিয়ান
ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় গরুটি লালন পালন করছেন। মানিক নামের তার ৫২ মণ ওজনের
ষাড়টির দাম চাচ্ছেন ১৫ লাখ টাকা। সদর উপজেলার ছিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান সুজায়েত হোসেন ঈদ উপলক্ষে সাদা বাহার নামে দুটি ষাড় গরু
প্রস্তুত করেছেন।
২৯ মণ ও ৩১ মণ ওজনের ষাড় দুটির দাম চাচ্ছেন ১৭ ও ২০ লাখ
টাকা। সদর উপজেলা হুগড়া গ্রামের আইয়ুব খান তার বাহাদুর নামের ২৫ মণ ওজনের
ষাড়ের দাম চাচ্ছেন সাত লাখ টাকা। কালিহাতী উপজেলার দেউপুর গ্রামের হাতেম
আলী তালুকদার তার প্রায় ২৮ মণ ওজনের ব্রাহামা জাতের টাঙ্গাইলের বস ষাড়ের
দাম চাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা।
সদর উপজেলার খারজানা গ্রামের গরুর খামারি
সোনা মিয়া জানান, আমিসহ আমার এলাকার প্রান্তিক চাষীরা একটা কোরবানির ঈদের
পর আরেকটা কোরবানির ঈদ আসা পর্যন্ত গবাদী পশুগুলোকে পরম মমতায় লালন পালন
করে বিক্রি যোগ্য করে তুলি। পশুগুলোকে অনেকটা সন্তানের মতো লালন-পালন করে
থাকে। সন্তান যেমন দূরে চলে গেলে কষ্ট হয়, তেমনি পালিত পশুটি বিক্রি করতে
তাদের বুকের কোণে ব্যাথা হয়। তারপরও সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য বিক্রি করতে
হয়। এবারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনটি ষাড় ও দুটি ছাগল প্রস্তুত করেছি।
কলেজ ছাত্রী হামিদা জানান, ইতিপূর্বেও আমি রতন ও টাইগার নামের দুটি বড় আকৃতির ষাড় বিক্রি করেছি। মানিক নামের ষাড়টির ন্যায্য দাম পেলে বিক্রি করতো। তাই সামর্থ ও দয়াবানদের আমার ষাড়টি নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ইউপি চেয়ারম্যান সুজায়েত হোসেন জানান, এবার গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। যেমন ভূষি, খুদ, চাল ও ভুট্টার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে গবাদিপশু পালনে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া জানান, কয়েক বছর যাবত নিজেদের লালন পালন করা পশু দিয়ে জেলার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। অতিরিক্ত পশু গুলো দেশের অন্যান্য জেলা সরবরাহ করা হয়। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে গরু আসার কোন প্রশ্নই আসে না।
তিনি জানান, প্রাকৃতিকভাবে গবাদি পশু মোটাতাজা করণের জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পশু মোটাতাজা করণের জন্য প্রত্যেক খামারিকে ঘাস চাষের জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে। প্রাণি স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ ব্যবহার না করার জন্য খামারিদের সচেতন করা হয়েছে। কোরবানির পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জেলার প্রতিদিন প্রতিটি হাটে পশু চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক নিয়োগ রয়েছে।
No comments