ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত দেলদুয়ারের লেবু চাষিরা
মাসুদ রানা, দেলদুয়ার:
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের লেবু চাষিরা নানা প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় লেবু বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
তারা চলতি
রমজানে লেবুর ভালো মূল্যে পেয়ে নতুন করে লেবু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলার
লেবু চাষীরা লেবুর লাভজনক মূল্য পেয়ে লেবু বাগানের প্রতি অধিক যত্নশীল
হয়েছে । সকাল থেকেই অধিকাংশ লেবু চাষী বাগান থেকে লেবু সংগ্রহের কাজ করেন ।
পরে সেগুলো পাইকার ও খুচরা বাজারে লাভজনক মূল্যে বিক্রি করেন । এছাড়া
লেবু বাগানের রক্ষণাবেক্ষনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকেই।
জানা
গেছে, বিগত ২০২০ সালের বন্যার পানিতে অনেক লেবু বাগান ব্যাপক
ক্ষতিগ্রস্থ হয় । এরপর থেকে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত লেবুর তেমন দামও
পায়নি লেবু চাষীরা । সে কারনে ওই সময়ে অনেকেই লেবু চাষ ছেড়ে ওই জমিতে
অন্যন্য শস্য চাষ শুরু করেন । একসময় এ অঞ্চলে লেবুর উৎপাদন ব্যাপক
পরিমাণে হওয়ার কারনে উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের পুটিয়াজানি এলাকায়
লেবুর হাট জমে ওঠেছিল । অথচ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এবং লেবু দাম না পেয়ে
অনেক কৃষকই লেবু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় । এরপর লেবু হাটেরও বেহাল
অবস্থা হয় । অথচ সে দুর্দিন কাটিয়ে লেবু চাষীরা আবার লাভের আশায় লেবু
বাগানে আগ্রহী হচ্ছে । তারা বর্তামানে দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকছেন
লেবু বাগানে । ভালো ফলনের আশায় লেবু চাষীরা যেন মন বসিয়ে লেবু বাগানের
যত্ন নিচ্ছেন । এতে লেবু লাভজনক দামে বিক্রি করে নিজেদের লাভের আশাও করেন
তারা । তবে লেবু চাষে সরকারী প্রণোদনা দাবী করে লেবু চাষীরা জানায় লেবু
চাষে সরকারী সহযোগীতার প্রয়োজন রয়েছে । লেবু চাষে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের
মাঝে সরকার সুদমুক্ত ঋণ কার্যক্রম চালু করলে পুনরায় পুঁজি গঠনের মাধ্যমে
দ্রুত লেবু চাষের সম্প্রসারণ হতে পারে বলে মনে করেন লেবু চাষীদের অনেকেই ।
এদিকে কৃষিবিভাগের উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে লেবু বাগান
পরিচর্যায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের লাউহাটি, তাঁতশ্রী,তারুটিয়া,হেরেন্ডপাড়া
দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেলদুয়ার উপজেলায় বর্তমানে ৪ শ’ ২১ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে । এর আগে এ অঞ্চলে প্রায় ৮শ’ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ করা হতো। অথচ ২০২০ সালের বন্যায় লেবু বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় অনেক কৃষক লেবু বাগান ভেঙ্গে দিয়ে ওই জমিতে সরিষা ও ভুট্টা সহ অন্যন্য ফসল চাষ করছে । এছাড়া ওই সময় লেবু বিক্রি করে লাভজনক মূল্যও পায়নি লেবু চাষীরা । সে কারনে উপজেলায় শতকরা ৪০ ভাগ লেবু চাষের জমি কমে গেছে । তবে লাভজনক মূল্যে লেবু বিক্রি করতে পারলে নতুন করে লেবু চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে বলেও জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ ।
নাল্লাপাড়া গ্রামের লেবু চাষী রব্বানী মিয়া (৬০) জানান, তিনি এ বছর ১৫০ শতাংশ জমিতে সীডলেস কলম্বো জাতের লেবু আবাদ করেছেন । এছাড়া রমজানে লেবুর ভালো দাম পাওয়ার জন্য আগে থেকেই বাগানের গুরুত্বসহকারে পরিচর্যা করেছেন । চলতি মৌসুমে লাভজনক মূল্যে লেবু বিক্রি করতে পেরে তিনি অনেক খুশি ।
একই গ্রামের লেবু চাষী ও লেবু গ্রাম লেবু চাষী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন মিল্টন জানান, এবার তিনি প্রায় ৫ একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন । লেবু বাগানের প্রতি যত্নশীল হয়ে পরিচর্যাও করছেন । বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কোন লেবু চাষীই আজও সরকারী কোন সহযোগিতা পায়নি । সরকারী সুদমুক্ত ঋণ দাবী করে লেবু চাষে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি। বর্তামানে লেবুর বাজার মূল্য কিছুটা সন্তোষজনক হওয়ায় নতুন করে লেবু চাষে ঝুঁকছেন অনেকেই।
পুটিয়াজানি গ্রামের লেবু ব্যবসায়ী নুরুল হক ও সোনা মিয়া জানান, তারা প্রায় ১৭ বছর ধরে লেবুর ব্যবসা করছেন । বর্তমান বাজারে লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । লেবুর চাহিদা অনুয়ায়ী লেবুর যোগান দিতে অনেকটাই বেগ প্রহাতে হচ্ছে তাদের। সে কারনে তারা লেবু ক্রয়—বিক্রয়ের প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রতিদিন হাটে বসেন । তারা আরও জানায় বিগত বছরের বন্যায় এ অঞ্চলের লেবুর অনেক বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । সে কারনে এ অঞ্চলে লেবুর যোগান বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না । সে জন্য তাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লেবু কিনতে হচ্ছে । এছাড়া চলতি বছরে লেবুর লাভজনক মূল্য পেয়ে খুশিও রয়েছেন তারা ।
আটিয়া ইউনিয়নের উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ উজ্জল হোসাইন জানান, লেবু চাষের জন্য আলাদা কোন প্রণোদনা দেওয়া হয় না। তবে তিনি মাঠে মাঠে গিয়ে লেবু বাগানের পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন । এতে লেবু চাষীরা আগে থেকেই লেবুর রোগ—বালাই সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন । ফলে লেবু চাষীরা রোগ—বালাই থেকে লেবুর ক্ষতি হওয়ার প্রতিকার করতে পারছে ।
দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাহবুবুল হাসান জানান, দেলদুয়ার উপজেলায় বর্তমানে ৪ শ’২১ হেক্টর জমিতে বানিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করা হচ্ছে । এছাড়া চলতি রমজান মাস ঘীরে বাজারে প্রতি কেজি লেবু ৮০ থেকে ১০০ টাকা হারে খুচরা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে । ফলে লেবু বিক্রিতে কিছুটা লাভবান হচ্ছে কৃষক । তবে লেবু বিক্রির মাধ্যমে কৃষক লাভবান হলে নতুন করে লেবু চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়বে বলেও জানান তিনি ।
No comments