শীতল পাটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দেলদুয়ারের পাটিশিল্পীরা - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    শীতল পাটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দেলদুয়ারের পাটিশিল্পীরা

    মাসুদ রানা, দেলদুয়ার :

    বহুকাল ধরে ঐতিহ্যের সাথে  শীতল পাটি তৈরি করে আসছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাটি শিল্পীরা ।  

    শীতল পাটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দেলদুয়ারের পাটিশিল্পীরা

    এসব পাটি  গুনে মানে উন্নত ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের হওয়ায় কালক্রমে দেশজুড়েই জনপ্রিয়তা অর্জন করে । অথচ আধুনিক যুগে এসে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শীতল পাটির কদরে অনেকটাই ভাটা পড়ে ।  ফলে বিপাকে পড়ে এ অঞ্চলের পাটি শিল্পীরা । তবে  পাটি তৈরির  কাজ যেন  তাদের রক্তে মিশে আছে । তারা শত কষ্টের মাঝেও বাব-দাদার এ পেশাকে বুকে লালন করে  আসছে । 

    সে কারনে সকল প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে পাটি তৈরির মধ্যে দিয়ে  আজও শীতল পাটির  ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন এ অঞ্চলের  পাটি শিল্পীরা । এ উপজেলার  শিল্পীরা অনেক দরদ দিয়ে মনের সব রং ঢেলে নিপুন হাতে তৈরি করেন আরামদায়ক ও টেকসই  শীতল পাটি  ।  

    বর্তমানে আধুনিকতার যাঁতাকল থেকে বেড়িয়ে এসে ঘুরে  দাঁড়ানোর প্রয়াসে পুরো উদ্যামে নিয়ে শীতল পাটির তৈরির কাজ করছেন এ অঞ্চেলের পাটিকররা । এ উপজেলার শীতল পাটি  গুণে মানে অনণ্যা হওয়ায়  নজর কারছে  বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন শপে । সেখান থেকে পছন্দশই শীতল পাটি সংগ্রহ করছে ক্রেতারা । এছাড়া উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের  হিংগানগর কামান্নাপাড়া লোকনাথ মন্দির  এলাকায় সপ্তাহে শুক্রুবার ও মঙ্গলবার  দুই দিন বসে পাটি বিক্রির হাট । এ হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাটি কিনতে আসেন ব্যসায়ীরা ।    

    জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে অনেক যতœসহকারে শীতল পাটি  তৈরি করে আসছে এ অঞ্চলের পাটিকররা ।   তাদের  তৈরি এসব  শীতল পাটি সারা দেশেই জনপ্রিয় ।  একসময়  গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শীতল পাটির কদর থাকলেও বর্তমানে আধুনিকতার যাঁতাকলে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এ শীতল পাটির কদর অনেকটাই কমে যায় । 

    অথচ পূর্ব পুরুষের এ পেশা টিকিয়ে রাখতেই পুরো উদ্যোমে কাজ করে যাচ্ছে এ অঞ্চলের পাটি শিল্পীরা । বর্তমানে নানা প্রতিকূলতাকে পিঁছনে ফেলে শীতল পাটি তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে তারা। এ অঞ্চলে তৈরি শীতল পাটি দৃষ্টিনন্দন,টেকসই, আরামদায়ক ও উন্নতমানের বৈশিষ্ট্যর দাবী রাখে বলে সারা দেশেই এর জনপ্রিয়তা রয়েছে । 

    সরেজমিন  ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের হিংগানগর, গোমজানি ও এলাসিন ইউনিয়নের সিংহরাগী গ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘরে ঘরে  চলছে পাটি বুননের কাজ । পাটিকর তাদের দক্ষ হাতের গাঁথুনি দিয়ে অনেক আকর্ষণীয় করে তৈরি করছে প্রতিটি পাটি । এসব পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল হলো এক  ধরনের গুন্ম বা মুত্রা জাতীয় উদ্ভিদ। 

    পাটি তৈরি করা হয় বলে ওই  উদ্ভিদটি এ অঞ্চলে  পাটিবেত হিসেবে পরিচিত লাভ করে । এ অঞ্চলের  পাটিশিল্পের বিশাল  এলাকা জুড়ে দেখা যায় পাটিবেতের চাষ  ।   এসব পাটি বেত প্রত্রিয়াজাত করে পাটি তৈরির জন্য উপযোগি করে দেন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা । পাটি তৈরির মূল কারিগর হলেন পরিবারের  নারী সদস্যরা ।  নারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পাটি বুননের কাজ করেন । 

    পাটি বুননের পাশাপাশি সাংসারিক কাজকর্মও করেন তারা । ফলে প্রতিটি পাটি তৈরি  করতে একজন নারীর সময় লাগে ৩ থেকে ৭ দিন  । এসব পাটির বেশির ভাগই উন্নতমানের শীতল পাটি । আর এসব শীতল পাটির চাহিদা সারা বছর থাকলেও গরমে চাহিদা বহুগুনে বৃদ্ধি পায় । সে সময় শীতল পাটির যোগান দিতে দিন রাত কাজ করেন পাটিকররা । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫ হাজার পরিবার এই পাটি শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে । আধুনিকযুগে  পাটির শিল্পের দুর্দিনে অনেকেই পেশা বদল করেছে বলেও জানা গেছে ।          

    তবে আটিয়া ইউনিয়নের বৃহত্তর  হিংগানগর গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায়  সব চেয়ে বেশি পাটি তৈরি হয় বলে হিংগানগর গ্রাম ঘীরে গড়ে ওঠেছে পাটি হাট । সপ্তাহে  শুক্রুবার ও মঙ্গলবার দুই দিন বসে পাটি  হাট । এ অঞ্চলের পাটিকররা তাদের পাটির পসরা সাজিয়ে বসেন হাটে  এলাকায়। বেলা ১১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত চলে পাটি ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম । সকাল থেকেই  দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাটি কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা ।  এ অঞ্চলে প্রতিটি  পাটির মান অনুযায়ী   ৮ শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারী মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে । এসব পাটির খুচরা মূল্য রয়েছে ১০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা । এ  উপজেলার  বেশিরভাগ পাটি স্থানীয় এ হাটেই  বিক্রি হয়ে থাকে । এছাড়া গ্রামে গ্রামে গিয়ে কিছু পাটি খুচরা মূল্যে বিক্রি করেন পাটিকররা। 

    হিংগানগর কামান্নাপাড়া  গ্রামের পাটি শিল্পী বেলা রানী দে(৬৫), ও চন্দনা রানী দে (৩২) জানান,  পরিবারের পুরুষ সদস্যরা শুধু পাটিবেত কেটে বেতি তৈরি করে দেন। পরে নারীরা বেতিতে রং দেওয়া সহ পাটি বুননের সব কাজ করে থাকেন । সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রতিটি পাটি তৈরিতে সময় লাগে প্রায় ৩ থেকে ৭ দিন । আর এসব পাটির বেশির ভাগই শীতল পাটি । তবে গরমে শীতল পাটি তৈরি কাজে চাপ থাকে । এসময় পাটির চাহিদা বেড়ে যায় । সে কারনে রাতেও কাজ করা লাগে । 

    একই গ্রামের পাটি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট জুরান চন্দ্র দে (৫২),কেশব চন্দ্র দে(৭০) ও গোপাল চন্দ্র দে(৫৩) জানান, পরিবারের  পুরুষ সদস্যরা পাটিবেত সংগ্রহ করে বেত থেকে বেতি তৈরি করে  থাকে । পরে নারীরা পাটি তৈরি করে দিলে তা হাটি নিয়ে বিক্রি করে দেন ।বর্তমানে তাদের নিকট থেকে পাটি কিনে আনেকেই অনলাইনে শপে উচ্চ মূল্যে ব্যবসা করেন বলেও জানান তারা । তবে  এ অঞ্চলের শীতল পাটির সুনাম রয়েছে বহুকাল থেকেই ।  পাটিকররা আরও বলেন , আধুনিক যুগে শীতল পাটির কদর কমে যাওয়া এ পেশা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে । এমন অবস্থায় এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকারী সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।  



    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728