বাসাইলে গরু চুরির হিড়িক ॥ দিশেহারা ক্ষুদ্র খামারি - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    বাসাইলে গরু চুরির হিড়িক ॥ দিশেহারা ক্ষুদ্র খামারি

    বাসাইল  প্রতিনিধি:

    টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের গোয়ালের গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। রাতের আঁধারে সংঘবদ্ধ চোর গৃহস্তের বাড়িতে হানা দিয়ে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সর্বস্ব। এ কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক খামারি ও গৃহস্তরা। চোর ঠেকাতে রাতের আঁধারে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন তারা। 

    বাসাইলে গরু চুরির হিড়িক ॥ দিশেহারা ক্ষুদ্র খামারি

    টাঙ্গাইলের পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত বংশাই নদীর তীরবর্তী জনপদ বাসাইল উপজেলার নাইকানীবাড়ি, মিরিকপুর, হান্দুলিপাড়া, রাশড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের এখন রাত কাটছে নির্ঘুমে। বিভিন্ন বাড়ি থেকে রাতের বেলা চুরি হয়ে যাচ্ছে পালের গরু। কারও দু’টি আবার কারও তিন-চারটি গরু চুরি হয়ে গেছে। অনেকের শেষ সম্বল দুধেল গাভী চুরি হওয়ায় পথে বসেছেন এসব খামারি। 

    সম্প্রতি এ এলকায় কমপক্ষে ৭টি বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। খামারীরা বলছেন, এ ব্যাপারে পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। গরু চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন এসব এলাকার খামারিরা। মিরিকপুর গ্রামের আব্দুর রহমান দুই বছর আগে মারা যান। সংসারের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেলে তার স্ত্রী শুকুরি বেগম দু’টি দুধেল গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তার গোয়াল থেকে রাতের আঁধারে ওই গাভীসহ  আরও দু’টি বখনা বাছুর চুরি হয়ে যায়। এতে তার সংসারের উপার্জন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। কোনদিন খেয়ে কোনদিন না খেয়েও কেটেছে তাদের দিন। শুকুরি বেগম বলেন, এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি। একই এলাকার আব্দুল হালিম মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়ার ৩টি গরু চুরি হয়েছে। রাতের বেলা তার গোয়াল থেকে গরু চুরি হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে নাইকানী বাড়ি গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়ার দুইটি গরু চুরি হয়। সংসারের আয়ের উৎস ছিল এই গরুর দুধ বিক্রির টাকা। চুরি হওয়ার পর থানায় বিষয়টি জানিয়েছেন। 

    বিভিন্ন হাট-বাজারে গেছেন চুরি হওয়া গরুর সন্ধান করতে। কোন লাভ হয়নি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন জুয়েল। নাইকানী বাড়ি গ্রামের আরেক ক্ষুদ্র খামারি আব্দুল করিমের চারটি গরু চুরি হয় গত ২০ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে। তিনিও অনেকটা স্বজন হারানোর শোকে দিশেহারা। হান্দুলি পাড়ার ইমরোজ আলী তালুকদারের দুইটি, একই এলাকার ওয়াদ আলীর দুইটি এবং রাশড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের দুইটি গরু চুরি হয়েছে। এসব ক্ষদ্র খামারিদের সংসারের আয়ের উৎস ছিল এসব গরুর দুধ। দুধ বিক্রি করেই চলতো তাদের সংসার। বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সংঘবদ্ধ চোর গরু চুরি করে সহজেই পালিয়ে যায়। বাসাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চুরি করে মাঝের বংশাই নদী পার হয়ে চলে যায় চোর। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের এখন রাত কাটছে নির্ঘুম অবস্থায়। তারা রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন গরু চুরি ঠেকাতে।

    বাসাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহেল বলেন, এ বিষয়ে আমি উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি। থানা পুলিশকেও বলেছি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এভাবে গরু চুরি হতে থাকলে গৃহস্তের গোয়াল শূন্য হয়ে পড়বে। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে খুব সহজেই চোর ধরা সম্ভব। কেন গরু চোর ধরা পড়ছে না বুঝতে পারছি না। এছাড়াও এলাকার লোকজনকে সচেতন করতে উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

    বাসাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, গরুচুরি রোধ করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। যাদের গরু চুরি হয়েছে তাদের কয়েকজন মৌখিকভাবে আমাদের জানিয়েছেন। তারপর থেকে রাতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই এসব চোরদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।

    গরু চুরির আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে এ এলাকার গৃহস্তদের। এ ব্যাপারে পুলিশের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।


    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728