টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের রক্ষণাবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবক - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের রক্ষণাবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবক

    রাইসুল ইসলাম লিটন:

    টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের বেহাল দশা দেখে রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে এসেছে একদল স্বেচ্ছাসেবী।
    টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের  রক্ষণাবেক্ষণে  স্বেচ্ছাসেবক


    তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে পাইপ কিনে ঈদগাহ্ মাঠে পানি দিচ্ছে। এ মাঠের মধ্য দিয়ে যেন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করে মাঠটিকে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য মাঠের দক্ষিণ দিকের ভেঙে যাওয়া গেটটি বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এ গেট দিয়ে এখন শুধুমাত্র পথচারীগণ চলাচল করতে পারে। এছাড়া ঈদগাহ্ মাঠে গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও আছে তাদের। সারা বছর মাঠটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক নিজেদের অর্থায়নে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে  তাদের।

    এ স্বেচ্ছাসেবক দলে রয়েছে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোক। তাদের দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়নের বুলি আওড়ালেও কাজের কাজ কিছুই করে না। ফলে এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় তোপের মুখে পড়েন টাঙ্গাইল পৌর মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন।

    বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছাসেবক দলটি নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে এ ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ্ মাঠ রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে এসেছে। 

    এদের মধ্যে রয়েছেন, আব্দুর রাজ্জাক, মাহবুব মনি, আব্দুল আলীম, দিনেশ চৌহান, গণেশ চৌহান, আনন্দ চৌহান, মোহাম্মদ হুমায়ুন, মো. মজিবর মিয়া, রঞ্জিত সরকার, শ্যামল চৌহান, সবুজ মোল্লা, শহিদুর রহমান, সিদ্দিক মন্ডল, মো. হৃদয় মিয়া প্রমূখ।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতাব্দি প্রাচীন টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের বর্তমানে বেহাল দশা। মাঠটি এখন ঘাস উঠে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে ন্যাড়া হয়ে গেছে। এছাড়া মাঠের উওর ও দক্ষিণ দিকের গেটগুলো ভেঙে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠের সীমানা প্রাচীর বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। ঈদগাহ্ মাঠের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যান চলাচলের ফলে বিভিন্ন স্থানে মাটি উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে টাঙ্গাইল পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে রাবিশ এনে জড়ো করে রেখেছে। 

    ১৯০৫ সালে স্থাপিত এ ঈদগাহ্ মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব টাঙ্গাইল পৌর কর্তৃপক্ষের হলেও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে না। ফলে ঈদগাহ্ মাঠটি এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। 

    স্থানীয়দের অভিযোগ, কেবলমাত্র বছরে দুই ঈদেই লোক দেখানো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এ মাঠের। তার পরে আর পৌর কর্তৃপক্ষ কোন খোঁজ-খবর নেয় না।


    স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, গত বেশ কয়েকদিন ধরে ঈদগাহ্ মাঠের মধ্যে দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় পুরো মাঠ ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। এছাড়া ঝড়ো বাতাস এলেই ঈদগাহ্ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় মাঠের ধুলোবালি উড়ে গিয়ে আস্তরণ পড়ে যায়। মাঠের উওর ও দক্ষিণ দিকের সব গেট ভাঙ্গা থাকায় ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন মাঠের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ফলে ঈদগাহ্ মাঠের ঘাস উঠে ন্যাড়া হয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। 

    কিছুদিন পূর্বেও মাঠের পশ্চিম দিকের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে ডাব গাছ, আম গাছসহ বিভিন্ন ধরনের ফলজ ও বনজ গাছ ছিল। সেগুলো বিভিন্ন সময়ে ঝড়ে ভেঙে গেছে। সেই জায়গাগুলোতে তারা নতুন করে গাছ লাগাবে চ এছাড়া মাঠের ধুলোবালি উড়া বন্ধ ও নতুন করে ঘাস গজানোর জন্য পাইপ দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। এ মাঠের মধ্যে দিয়ে যেন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য মাঠের দক্ষিণ দিকের ভাঙ্গা গেটটি বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

    তারা আশাবাদী, এ রক্ষণাবেক্ষণের ফলে এই ঈদগাহ্ মাঠ আবারও ব্যবহার উপযোগী হবে।

    বিন্দুবাসিনী স্কুল ফ্রেন্ডস নেটওয়ার্কের (এসএফএন) সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টেলিভিশনের টাঙ্গাইলের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মো. শামীম আল মামুন জানান, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের পশ্চিম ও উত্তর পাশের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে ১'শত ছায়া দানকারী গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া একটু স্বাভাবিক হলেই গাছ লাগানো শুরু করা হবে। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে লাগানো গাছ গুলো বড় না হওয়া পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণও করা হবে।

    টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগহ্ মাঠের বেহাল দশা প্রসঙ্গে মো. আবুবক্কর মিয়া, জাহিদুল ইসলাম, মো. বাহারুল ইসলাম জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে টাঙ্গাইলের এ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠটির বর্তমানে বেহাল দশা। পৌর কর্তৃপক্ষের মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকলেও তারা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে না। শতাব্দি প্রাচীন এ ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়নের জোর দাবি জানান তারা।

    এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌর মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) অনুমোদন হয়েছে। খুব দ্রুতই ঈদগাহ্  মাঠের উন্নয়নের কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এ প্রকল্পে ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে, বর্তমান মিম্বরটি ভেঙে বড় করা, মাঠে সবুজ ঘাস লাগানো, চারটি প্রবেশদ্বারে নতুন করে গেট লাগানোসহ মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও ওযু খানা তৈরি করা।

    খুব দ্রুতই ঈদগাহ্ উন্নয়নে 
    পৌর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার আহ্বান করবে। আশা করা যায় ঈদুল আযহার আগেই উন্নয়নের কাজ শুরু করা যাবে।

    এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় প্রতিশ্রুত ঈদগাহ্ উন্নয়নের কাজের অনুমোদন হয়েছে। আগামী বছরের ঈদুল ফিতরের পূর্বেই টাঙ্গাইলবাসীকে একটি নান্দনিক ঈদগাহ্ মাঠ উপহার দিতে আমি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।

    এ মাঠের উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, মাঠে শুধু মাত্র শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ থাকবে। এই ঈদগাহ্ মাঠকে কেন্দ্র করে এখন যে সমস্ত ব্যবসায়ীক স্থাপনা ও কর্মকাণ্ড রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হবে।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728