মধুপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশশিল্প
মো. নজরুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক:
টাঙ্গাইলের মধুপুরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশ শিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। তৈরিকরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা পরিবারগুলো। ধীরে ধীরে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন তারা।
মধুপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দশক ধরে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। এক সময় প্রচুর বাঁশ এ অঞ্চলে উৎপাদন হতো তা দিয়ে গৃহকাজের কুলা, মোড়া, ঝুড়ি, ঢাকনাসহ নানা প্রয়াজনীয় জিনিস তৈরি করতো।
কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকম পণ্য আসায় হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। একদিকে যেমন বাঁশ উৎপাদন কমছে, অপরদিকে প্লাস্টিকের প্রতিযোগিতায় বাঁশের পণ্যগুলো টিকতেও পারছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল করছেন। বর্তমানে মাত্র ৩৫ থেকে ৩০ টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোনো রকমে টিকে রয়েছে।
কদিমহাতীল গ্রামের গৃহিনী তাসমীন ইসলাম শিশির জানান,গ্রামের মানুষ তাদের সারা বছরের খাদ্যশষ্য চলতি মৌসুমের ধান সংরক্ষণ করে রাখেন বাঁশের তৈরি বেগ বা ডোলের মধ্যে।
বাঁশশিল্প নিয়ে মধুপুরের কবি রাত মুহাম্মদ তার কবিতায় লিখেন, হয়নি বলা আর যায়নি জানা কেন আমার এপার-ওপাড়...
উপজেলার বেতবাড়ী গ্রামের বাঁশ শিল্পী পুতল রাণী জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পুঁজির অভাব, চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি হওয়ায় এখন আর তেমন লাভ হয় না।
অভিরাম বর্মণ, নদু বর্মণসহ বেশ কয়েকজন জানান, চাহিদা কমে যাওয়া, পুঁজির অভাবে এখন আর পোষায়ণা। আমারা অতি কষ্টে চলছি। দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতিতে খুবই কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে।
সচেতনমহল মনে করছেন, এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কোন উদ্যোগ নেই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে। বিলুপ্ত প্রায় এ বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে জরুরী ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা,পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। একই সাথে এ পেশার সাথে জড়িতদের তালিকা প্রণয়ন পূর্বক সে সঙ্গে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, প্রান্তিক এ কুটির শিল্পের লোকজনকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই প্রশিক্ষন ও প্রনোদনা দিয়ে থাকি। তিনি আরো জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে তা মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন জানান, এ শিল্পের সাথে জড়িতদের খোঁজ নিয়ে জীবনমানের কথা চিন্তা করে পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমাজ সেবা ও যুব উন্নয়ণকে উদ্যোগ নিতে বলবো।
No comments