ছেলে শিকলে বন্দি ৩০ বছর ! মায়ের ভিক্ষায় চলছে সংসার - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    ছেলে শিকলে বন্দি ৩০ বছর ! মায়ের ভিক্ষায় চলছে সংসার

    আব্দুল লতিফ ঘাটাইল:


    ৩০ বছর ধরে পায়ে লোহার শিকলে বন্দি জীবন পার করছেন ৩৭ বছরের যুবক সাইফুল।মানসিক ভারসাম্যহীন সাইফুলকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন মা রহিমা বেগম। 

     

    ছেলে শিকলে বন্দি ৩০ বছর ! মায়ের ভিক্ষায় চলছে সংসার

     রহিমা বেগমের স্বামী বহর আলী প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন।রহিমা বেগম স্বামীসহ জমিজমা হারিয়ে পথে-ঘাটে ভিক্ষা করে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।ঘটনাটি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার ধারিয়াল গ্রামের। 

    মানসিক ভারসাম্যহীন সাইফুল ঘাটাইল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ধারিয়াল গ্রামের মৃত বহর আলী ছেলে।অভাবের সংসারে ১৯৮৮ সালে সাইফুল জন্মগ্রহন করেন। 
     

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সাইফুলকে।কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো বসে সময় কাটছে তাঁর।বারান্দায় মাটিতেই বিছানা পাতানো রয়েছে।সেখানেই শুয়ে থাকে সে। সাইফুলকে শিকল থেকে খুলে দিলেই মানুষকে কামড় দিতে চাই। যাকে সামনে পায় তাকে ঝাপটে ধরে। সুযোগ পেলে শরীরের কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ায় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

    সাইফুলের মা রহিমা বেগম বলেন, জন্মের পর থেকে মানুষ দেখলে চেয়ে থাকতো। ছোটবেলা থেকে কথা ঠিকমতো বলতে পারে না।৭ বছর থেকে মানুষের দিকে শুধু চেয়ে থাকা নয়, খামচি ও কামড় দেয়ার চেষ্টা করতো।ছোটবেলায় অসুস্থতার লক্ষণ আমরা বুঝতে পারিনি। 


    তিনি বলেন, একসময় এলাকাবাসী আচরনে ভয় পেতে শুরু করে।যখন ৮ বছর বয়স তখন 
    পায়ে লোহার শিকল পড়িয়ে দেয়া হয়। যা এখন পর্যন্ত চলছে। শিকল খুলে দিলেই বড় বড় চোখ করে মানুষের দিকে এগিয়ে যায়।ছোটবেলায় বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের পিছনে ঘুরেছি চিকিৎসা করাতে পারেননি। ডাক্তার কবিরাজ রোগ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায়
    পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর চিন্তা করেছিলাম। মানসিক হাসপাতালে কে
    নিয়ে যাবে সেই সিন্ধান্তে মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়নি।আমার স্বামীটা ২০ বছর আগে মারা গেছে।
     
    রহিমা বেগম বলেন, পথে ঘাটে ভিক্ষা করে ছেলেকে খাওয়াচ্ছি।সরকারের দেয়া ঘরে আছি। সরকার থেকে ছেলের নামে ২৫০০ টাকা ও আমার নামে ১৮০০ টাকা ভাতা পেয়ে তা দিয়ে সংসার চলে না। যে কারনে চিকিৎসা বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বেঁচে আছি। 
     

    স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম বলেন, ছোটবেলা থেকে সাইফুল মানসিক ভারসাম্যহীন। তিন-চার বছর ধরে তার পাগলামি বেড়ে গেছে।শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।ঘরে বৃদ্ধ মা তার সেবা যত্ন করতেছে।গ্রামের মানুষ যতটুকু পারছে করতেছে।

    ধারিয়াল জামে মসজিদের সেক্রেটারী সুমন আল মামুন বলেন, সাইফুল ৩০ বছর ধরে শিকলে বন্দি রয়েছে।সে অসহায় জীবনযাপন করছে।তার মা পথে ঘাটে ভিক্ষা করে কোন রকম আহার তার মুখে তোলে দেয়।আমরা বিভিন্ন ভাবে তাকে সাহায্য করেছি।সাইফুলকে শিকলে থেকে খুলে দিলে পাগলামী শুরু করে দেয়।ছোট শিশুরা তাকে দেখে ভয় পাই।এছাড়াও ঘরবাড়ি ভাঙ্গচুর করে।যে কারনে বাধ্য হয়ে মা তাকে শিখলে বেঁধে রেখেছেন।সরকার যদি থাকার ব্যবস্থা ও কোন আর্থিক অনুদান দিয়ে তাকে সহযোগিতা করতো তাহলে আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
     

    ঘাটাইল পৌরসভার ৬নং বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জালাল হোসেন বলেন,আমাদের সমবয়সী হবে সাইফুল।ছোটবেলা থেকে মানসিক সমস্যা। দারিদ্রতার কারণে সঠিক সময়ে সাইফুলের চিকিৎসা করা হয়নি। সাইফুল বড় হলে রোগটি প্রকট আকার ধারন করে।শিকল থেকে ছেড়ে দিলেই মানুষকে কামড় দিতে যায়। যাকে সামনে পায় তাকে ঝাপটে ধরে। সুযোগ পেলে শরীরের কাপড় খুলে ঘুরে বেড়ায়। এইজন্য এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছেন।এছাড়া অন্য উপায় তাদের হাতে নাই।
     

    ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সরকার বলেন,সাইফুল ও তার মার বিষয়টি জেনেছি।তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা ও তার মাকে ভাতা করে দিয়েছি।আমাদের যতটুকু সুযোগ ছিল করা হয়েছে। 

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন,সাইফুল ইতিমধ্যে ভাতার আওতায় রয়েছেন।ভাতা ভুক্ত থাকার পরেও যদি তার চলতে কষ্ট হয়।তাহলে উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই তার পাশে দাঁড়াবে। তার পূর্ণবাসন করার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা করব।আমি ইতিমধ্যে জেনেছি তার মা ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত।আমাদের কাছে তার সহযোগিতার সুযোগ আছে।আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। 

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728