মধুপুরের জনবান্ধব প্রশাসনের কারিগর ইউএনও মো. জুবায়ের হোসেন - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    মধুপুরের জনবান্ধব প্রশাসনের কারিগর ইউএনও মো. জুবায়ের হোসেন

    আব্দুল লতিফ।।

    টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা আজ নতুন পরিচয়ে আলোচিত, কারণ এখানে দায়িত্ব পালন করছেন এমন একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার যিনি শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, বরং সাধারণ মানুষের প্রকৃত বন্ধু, সেবক ও প্রেরণার বাতিঘর। 

    মধুপুরের জনবান্ধব প্রশাসনের কারিগর ইউএনও মো. জুবায়ের হোসেন

    তিনি হলেন মো. জুবায়ের হোসেন, ৩৫তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও উদার মনের মানুষ। জন্ম ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলায়, পিতা মির্জা মো. নূরুল হকের আদর্শে বেড়ে ওঠা এই মানুষটি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী এবং কর্মঠ। ২০০৬ সালে গ্রামের স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে তিনি নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখেন, পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক (২০১৪) এবং স্নাতকোত্তর (২০১৬) সম্পন্ন করেন। জীবনের এক করুণ অধ্যায়ে ২০০৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে অপচিকিৎসার কারণে বাম হাত হারিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার মনোবল ভাঙতে পারেনি। বরং এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। 

    ২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রশাসনিক জীবনের সূচনা করেন তিনি। সেখানেই দায়িত্ব পালনের সময় সততা ও নিষ্ঠার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মানুষের আস্থা অর্জন করেন। পরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি সাধারণ মানুষের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। এই পদে থেকে জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, ভূমি সেবায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জনবান্ধব প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। 

    এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মধুপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একের পর এক কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে অল্প সময়ের মধ্যেই মধুপুরবাসীর আস্থা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে মধুপুর উপজেলায় উন্নয়ন, সুশাসন ও স্বচ্ছতার জায়গাগুলোতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করা জরুরি। তাই প্রথম থেকেই তিনি কাজ শুরু করেন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় করে তিনি উপজেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম হন। এর পাশাপাশি সরকারি খাস জমি উদ্ধারেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তার উদ্যোগে বনের খাস জমি এবং রেকর্ডীয় খাস জমি উদ্ধারে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে। দীর্ঘদিন দখল হয়ে থাকা এসব জমি উদ্ধারের মাধ্যমে সরকারী সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষও প্রশংসার চোখে দেখছে।

    মো. জুবায়ের হোসেনের সবচেয়ে বড় অবদান শিক্ষাক্ষেত্রে। তিনি প্রায়ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা এবং কলেজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে শিক্ষার মান বৃদ্ধির করণীয় নির্ধারণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে নানা পদক্ষেপ নেন। তার প্রচেষ্টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরেছে এবং শিক্ষার মানও উন্নতির পথে। তার লক্ষ্য শুধু পরীক্ষার ফল ভালো করা নয়, বরং একটি প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

    দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণেও তিনি সরাসরি মাঠে কাজ করছেন। নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন। ক্রেতারা যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে সে জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আলোচনা করছেন। একইসঙ্গে অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্তকরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করেছেন তিনি। তার এসব পদক্ষেপ শুধু প্রশাসনিক কাজ নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যা মানুষকে তাকে আরও কাছের করে তুলেছে। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও তিনি অনন্য। রাস্তাঘাট সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ, হাটবাজারের উন্নয়ন, টিআর-কাবিখার স্বচ্ছ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তিনি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনোরূপ অনিয়ম বা দুর্নীতি যাতে না হয় সে বিষয়ে তিনি সবসময় কঠোর নজরদারি করেন। ফলে মধুপুর উপজেলার উন্নয়নের গতি বেড়েছে, সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। তার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি লাল মাটি ও টিলা কাটা বন্ধ করা। এই অবৈধ কার্যক্রম পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর ছিল, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলছিল। 

    তিনি দিন-রাত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেছেন, যার ফলে পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে। এতে স্থানীয় মানুষও তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। শুধু প্রশাসনিক কাজ নয়, মানবিক দিক থেকেও তিনি সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। তার মতে, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। তাই যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। কোনো সেবাপ্রার্থী অফিসে এলে তাকে হাসিমুখে গ্রহণ করেন এবং দ্রুততম সময়ে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন। তার এ মনোভাব সাধারণ মানুষকে দালাল ও ভোগান্তিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করেছে।

    জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর একাধারে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদের প্রশাসক, পৌরসভার প্রশাসক এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বহুমুখী দায়িত্ব সামলানো সহজ কাজ নয়, কিন্তু তিনি দক্ষতার সঙ্গে সবকিছু পরিচালনা করছেন। তার দৃঢ় মনোবল, সততা ও সেবার মানসিকতা তাকে সফল করেছে।

    রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এমন একজন কর্মকর্তা শুধু প্রশাসনিক প্রধান নন, তিনি মধুপুরের জন্য আশীর্বাদ। তিনি জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ একজন প্রকৃত সেবক।

    সংসার জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক হলেও দায়িত্ব পালনে কখনো অবহেলা করেন না। ব্যক্তিগত জীবনে সাদাসিধে এই মানুষটির কাছে প্রশাসনিক পদ মর্যাদার কোনো অহংকার নেই, বরং জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করাটাকেই তিনি বড় মনে করেন। তার প্রতিটি উদ্যোগে প্রমাণিত হয় তিনি জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত একজন উদার, মানবিক ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে মধুপুরে তার কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে যে আস্থা তৈরি করেছে তা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হবে। কারণ একজন মানুষ যখন নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করেন, তখন তিনি জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নেন। মো. জুবায়ের হোসেন সেই বিরল কর্মকর্তাদের একজন, যিনি নিজের সততা, নিষ্ঠা ও সেবার মানসিকতা দিয়ে হয়ে উঠেছেন মধুপুরবাসীর আশার আলো।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728