বাসুলিয়া যেন বাসাইলের প্রাকৃতিক স্বর্গ - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    বাসুলিয়া যেন বাসাইলের প্রাকৃতিক স্বর্গ

    শরীফুজ্জামান, বাসাইল

    প্রকৃতির বিশুদ্ধতার মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার বাসুলিয়া নামক স্থানে, যা স্থানীয়ভাবে “চাপড়া বিল” নামে পরিচিত। 

    বাসুলিয়া যেন বাসাইলের  প্রাকৃতিক স্বর্গ

    বর্ষা এলেই এই অঞ্চল এক অপরূপ রূপ ধারণ করে, যা দেখে মনে হয় যেন প্রাকৃতিক স্বর্গ নেমে এসেছে মাটির পৃথিবীতে। হিজল, করচ ও নানা জলজ বৃক্ষরাজি ঘেরা এই বিল আজ শুধু একটি জলাভূমি নয়—বাসাইলবাসীর ভালোবাসা, গর্ব এবং পর্যটকদের আকর্ষণের এক নতুন ঠিকানা। বাসুলিয়া যেন প্রকৃতির একটি খোলা চিত্রশালা—যেখানে হৃদয় আর চোখ একসাথে প্রশান্তি খুঁজে পায়।

    বাসুলিয়া বা চাপড়া বিল অবস্থিত বাসাইল উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২–৩ কিলোমিটার পূর্বে। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পর্যটকরা অটো, সিএনজি, রিকশা অথবা মোটরসাইকেল নিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন। বর্ষাকালে রাস্তার দুই পাশে পানি থৈ থৈ করে থাকে, হিজল গাছের সারি যেন আপনাকে আমন্ত্রণ জানায় স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করতে। এলজিইডি কর্তৃক রাস্তাঘাটের উন্নয়নও ভ্রমণকে করেছে আরও আরামদায়ক।

    বর্ষা মৌসুমে বাসুলিয়া তার প্রকৃত রূপে আত্মপ্রকাশ করে। তখন পুরো এলাকা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। হিজল ও করচ গাছের সারিগুলো পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের ছায়া পড়ে পানির উপর, সূর্য আলোয় গাছের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা ঝিলমিল করে। মাঝে মাঝে পাখির ডাক, বাতাসে পানির ঢেউয়ের মৃদু শব্দ, আর নৌকার ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ পরিবেশকে করে তোলে সুরময় ও হৃদয়ছোঁয়া।

    চাপড়া বিলকে এখন সবাই “বাসুলিয়া” নামে ডাকছে। ঢাকার আশুলিয়ার সাথে পরিবেশগত সাদৃশ্য থাকায় এই নামকরণ করা হয়েছে। “বাসাইলের আশুলিয়া” বলতে গিয়ে “বাসুলিয়া” নামটির প্রচলন ঘটে, যা আজ স্থানীয় ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই নামেই এখন বিলটি এক অনন্য পর্যটন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

    বর্ষাকালে এই বিলে ভেসে বেড়ানোর জন্য ইঞ্জিনচালিত ও দেশি নৌকা সহজেই ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকা নিয়ে হিজল গাছের নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যেন এক স্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা। অনেক পর্যটক এখানে আসেন শুধুমাত্র ছবি তুলতে, গান গাইতে, ভিডিও করতে বা নির্জনে কিছু সময় কাটাতে। ঈদের ছুটিতে, পূর্ণিমার রাতে বা বন্ধুদের আড্ডার স্পটে এটি অন্যতম পছন্দের জায়গা।

    চাপড়া বিল বা বাসুলিয়া কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানই নয়, এটি স্থানীয়দের আয়েরও একটি উৎস। নৌকা চালানো, খাবারের দোকান, ভ্রাম্যমাণ ক্যাফে, ছোটখাটো দোকান—সবকিছু মিলিয়ে এই বিল ঘিরে একটি অর্থনৈতিক চক্র গড়ে উঠেছে। তরুণরা মৌসুমি আয় করছে, অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট তৈরিতে এই বিলকে ব্যবহার করছে। এর ফলে বাসাইল উপজেলার অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

    স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বিল এলাকায় পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয়রা সচেতন ভূমিকা রাখছেন। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পর্যটকদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে দেখা যায়। প্লাস্টিক বর্জ্য নিষিদ্ধ করার প্রচারণাও চলছে।

    যারা একবার বাসুলিয়া ভ্রমণ করেছেন, তাদের কাছে এটি শুধুমাত্র একটি ভ্রমণ স্থান নয়—এটি হয়ে গেছে হৃদয়ের এক কোমল অনুভূতির নাম। কেউ এখানে প্রেমের স্মৃতি বয়ে বেড়ান, কেউবা প্রকৃতির সাথে নিঃশব্দ বন্ধন গড়ে তোলেন। ইউটিউবার, ব্লগার, আলোকচিত্র শিল্পীরা বাসুলিয়াকে ব্যবহার করছেন তাদের সৃষ্টিশীল কাজে।

    বাসুলিয়া এখন আর শুধুই বিল নয়—এটি বাসাইলের হৃদয়, টাঙ্গাইলের গর্ব এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় এক পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, শান্ত পরিবেশ ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা এটিকে করে তুলেছে পর্যটকদের স্বপ্নের গন্তব্য। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায়, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে এটিকে বাংলাদেশের সেরা প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।  তবে ভ্রমন পিপাসুদের দাবি , বাসুলিয়াকে ঘিরে পর্যটনকে আরও সুসংগঠিত ও টেকসই করতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। যেমন—বিশ্রামাগার, পাবলিক টয়লেট, পর্যটন তথ্য কেন্দ্র, পার্কিং ব্যবস্থা, উদ্ধারকারী টিম এবং একটি বার্ষিক ‘বাসুলিয়া উৎসব’ চালু করা যেতে পারে। এতে করে শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয় পর্যায়েও পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব হবে।


    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728