নদী খাল জলাশয় নেই তবুও টাঙ্গাইলে নির্মাণ হচ্ছে ৯ কোটি টাকার ব্রিজ! - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    নদী খাল জলাশয় নেই তবুও টাঙ্গাইলে নির্মাণ হচ্ছে ৯ কোটি টাকার ব্রিজ!

    রাইসুল ইসলাম লিটন:

    নদী, খাল  জলাশয় নেই, তবুও সড়ক বিভাগ নির্মাণ করছে ৯ কোটি ১০ লাখ টাকার ব্রিজ। দুই পাশে রয়েছে বাড়ি-ঘর ও রাস্তা। 

    নদী খাল জলাশয় নেই তবুও টাঙ্গাইলে নির্মাণ হচ্ছে ৯ কোটি টাকার ব্রিজ!

    টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের রতনগঞ্জ খিলগাতী এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে ব্রিজটি।

    টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের অফিস সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে ৩৪.৮৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ৯ কোটি ১০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই ব্রিজ। এ ব্রিজটির নির্মাণ কাজ পায় এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা লি. নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজটি বাস্তবায়ন করছে মনোজ ও সুমন নামের টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের দুই প্রভাবশালী ঠিকাদার। যারা সড়ক বিভাগের বেশির ভাগ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

    ইতিপূর্বে তাদের ঠিকাদারী বিভিন্ন কাজের অনিয়ম ও সড়ক বিভাগের সাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়  নিয়ে গণমাধ্যমে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজের প্রস্তুতি চলছে। ব্রিজটি যেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে এটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের রতনগঞ্জ খিলগাতী এলাকায়। সাধারণত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, পানিপ্রবাহ কিংবা যেখানে কোনো খাল এবং নদীনালা থাকে কিংবা পানির প্রবাহ থাকে এমন জায়গায়। কিন্তু নির্মাণাধীন ব্রিজটির দুই পাশে কোনো জলাশয় নদী বা কোন খাল নেই।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে তার দুই পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িঘর ও রাস্তা রয়েছে।  আশে পাশে কোনো খাল, নদীনালা ও জলাশয় নেই পানি প্রবাহিত হওয়ার । স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ এখানে সরকারি টাকা অপচয় না করে এই টাকা অন্য কোন রাস্তা ও ব্রিজের কাজে লাগাতে পারতো। স্থানীয় নাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সার্ভেয়ার বেনজীর আহমেদ বলেন, যেখানে ব্রিজ হচ্ছে সেখানে নদী বা খাল কোনদিনই ছিল না। এখানে ব্রিজের কোন প্রয়োজন নেই, শুধু শুধু সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুজ্জামাল ও রতনগঞ্জ বাজার এলাকার আলম মিয়া বলেন, এখানে কোনদিনই কোন খাল ছিল না। এখানে ব্রিজ তৈরি করার কোন যুক্তিই নাই। 

    নদী বা খালের পানিপ্রবাহের পথ তো দূরে থাক ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা ও বাড়ী ঘর ছাড়া কিছুই নেই। খিলগাতী গ্রামের নান্নু মিয়া, আজগর আলী ও ইলিমুদ্দিন বলেন, গরু ছাড়া গোয়ালের যেমন মূল্য নেই, ঠিক তেমনি কোনো জলাশয় বা নদী ছাড়া ব্রিজের কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে কেন ব্রিজ করা হচ্ছে আমরা কেউ জানি না। তারা আরো জানান,এখানে  লোহার ব্রিজ কয়েক যুগ আগে করা হয়েছিল তখন কাজে লাগতো। এখানে প্রায় ২ যুগ আগে মানুষজন ঘর বাড়ী নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করেছে। এখন নদী খাল বা জলাশয় না থাকায় কোন পানি প্রবাহিত হয় না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নাগবাড়ী ইউনিয়ন উপসহকারী ( ভূমি) কামরুজ্জামান মৌজা ম্যাপ ও ভলিয়ম বই পর্যালোচনা করে জানান, সিএস, আরএস ও বিএস রেকর্ডে সরকারি রাস্তা ব্যতীত ওই জায়গায় কোন নদী, খাল বা জলাশয় নেই।

    এ বিষয়ে ওই কাজের ঠিকাদার মনোজ ও সুমন বলেন,  বলেন, আমরা ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ পেয়েছি, তাই কাজ করছি। আমরা না করলে অন্য কেউ করতো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে  সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেন।  টাঙ্গাইলের মধুপুর সড়ক বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, পূর্বে এখানে লোহার ব্রিজ ছিল, তাই সেখানে ব্রিজ করতে হবে। তাছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য বন্য হলে কিভাবে পানি প্রবাহিত হবে এজন্য এখানে ব্রিজ করা হচ্ছে। ব্রিজের পশ্চিম এবং রাস্তার দক্ষিণ পাশে গ্রামের লোকজনের পায়ে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে, সেখানে যে কোন প্রতিষ্ঠান কালভার্ট বা ব্রিজ তাদের প্রয়োজনে করতে পারবে। 

    এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান জানান, ব্রিজের অনুমোদন আমি দেই না। প্রধান কার্যালয় থেকে টিম সরেজমিনে এসে দেখে, শুনে বুঝে অনুমোদন দেয়। নদী খাল জলাশয় আছে কিনা, তা নতুন করে যাচাই করে ব্রিজের কাজ করা কিংবা কাজ বন্ধ করা আমার দায়িত্ব নয়। 

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728