যুবলীগ নেতার বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার নিয়ে টাঙ্গাইলে তোলপাড়! - TangailTimes24
  • সংবাদ শিরোনাম

    যুবলীগ নেতার বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার নিয়ে টাঙ্গাইলে তোলপাড়!

    রাইসুল ইসলাম লিটন :

    টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সদুল্লাপুর গ্রামের আওয়ামী যুবলীগ নেতা মো. সাদ্দাম হোসেনের গোপনাঙ্গ কাটা বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার নিয়ে জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। জেলা সদর ও উপ-শহর এলেঙ্গায় বিষয়টি ‘টক অব দ্যা টাউন’-এ পরিণত হয়েছে।

    যুবলীগ নেতার বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার নিয়ে টাঙ্গাইলে তোলপাড়!
     

     ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মো. সাদ্দাম হোসেনের বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের নেতা ও সদুল্লাপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। তিনি উপ-শহর এলেঙ্গায় মোবাইলের ব্যবসা করতেন। পরিবারের পক্ষ থেকে সাদ্দামকে বন্ধুরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে
    বলে দাবি করা হচ্ছে। সাদ্দামের বন্ধুদের পরিবার থেকে এটাকে দুর্ঘটনা দাবি করা হলেও বন্ধুরা পলাতক রয়েছে। মঙ্গলবার(৪ জুলাই) বিকালে সাদ্দাম হোসেনের মরদেহ দাফন করতে এসে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আনার দাবি জানান, আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন। বিষয়টির রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নেমেছে র‌্যাব ও পিবিআইয়ের একাধিক
    টিম।


    জানাগেছে, এলেঙ্গা পৌরসভার রাজাবাড়ী গ্রামের মো. কামাল ড্রাইভারের ছেলে রাব্বী(২৫), রেজাউল করিম মংলার ছেলে মো. লিসান(২৪), জামাল উদ্দিন ওরফে এছহাকের ছেলে বাপ্পী(২৬), মো. লাবু মিয়ার ছেলে সাব্বির(২৫) ও এলেঙ্গা বাস্ট্যান্ডের জনৈক আকাশ(২৩) গত রোববার(২ জুলাই) দুপুরে মো. সাদ্দাম হোসেনের মোবাইলের দোকানে এসে একত্র হন। তারা পরস্পর বন্ধু হওয়ার সুবাদে সাদ্দামকে নিয়ে তিনটি মোটরসাইলযোগে রাজশাহী বেড়াতে যান।

     রোববার গভীর রাতে তিনটি মোটরসাইকেল সহ পাঁচ বন্ধু বাড়িতে ফিরে এলেও সাদ্দাম হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে তারা প্রকাশ করেন। খবর পেয়ে স্বজনরা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সাদ্দাম হোসেনের মরদেহ শনাক্ত করেন। সেখানে তারা জানতে পারেন- ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ডের ফ্লাইওভারের নিচে বিবস্ত্র অবস্থায় যুবকটিকে পড়ে থাকতে দেখে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে রেখে গেছে। এবং ওইদিন বা রাতে ওই স্থানের আশপাশে কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেনি।


    এতে স্বজনদের সন্দেহ দৃঢ হলে তারা সাদ্দামের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার(৪ জুলাই) বিকালে সাদ্দাম হোসেনের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
    সরেজমিনে জানা যায়, সাদ্দামের মরদেহ বাড়িতে আনা হলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। সাদ্দামের মা জোসনা বেগম, স্ত্রী রুপা বেগম, বাবা দুলাল হোসেন সহ আত্মীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়ে বিলাপ করতে থাকেন।


    বিলাপের মাঝে স্ত্রী রুপা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। মরদেহ বাড়িতে আনার খবরে স্থানীয় শ’ শ’ লোক সাদ্দামকে শেষবার দেখতে ভির জমায়। মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় ঈদগাঁ মাঠে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে স্থানীয় সামাজিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।


    সাদ্দামের মৃত্যুতে শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বাড়িতে এসে কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এ সময় তার সাথে সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি বুলবুল হাসান, যুবলীগ নেতা মো. মুছা মিয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবে যুগ্ম-সম্পাদক আতিকুল ইসলাম আতিক সহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সদর উপজেলা আওয়ামী
    যুবলীগের সহ-সভাপতি বুলবুল হাসান জানান, মো. সাদ্দাম হোসেন আওয়ামী যুবলীগের একজন বলিষ্ঠ নেতা ছিলেন। তিনি আগামি কাউন্সিলে গালা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে স্থানীয় যুবলীগের অপুরণীয় ক্ষতি সাধিত হল।

     এদিকে, সোমবার(৩ জুলাই) দুপুর থেকে রাব্বী, লিসান, বাপ্পী, সাব্বির ও আকাশ তাদের বাড়ি এলেঙ্গার রাজাবাড়িতে নেই। তারা প্রত্যেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। বাড়িতে শুধুমাত্র বৃদ্ধ মহিলা ছাড়া অন্যরাও বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কামাল ড্রাইভারের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, বাড়িতে তিনি ছাড়া কেউ নেই। তিনি আর কোন কথা বলতে রাজি হননি। সরেজমিনে ছায়া তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত র‌্যাব ও পিবিআইয়ের কর্মকর্তাদেরও রাজাবাড়ী গ্রামে সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে ও প্রতিবেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা যায়।


    অপরদিকে, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের মোবাইল ব্যবসায়ী সহ চা-স্টলগুলোতে ১০-১২ লাখ টাকা ব্যয় করে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে বলে কানাঘুষা চলছে। কেউ বলছেন হত্যা বা দুর্ঘটনা যাই হোক আইনিভাবে কোনো কিছুই হবেনা।


    প্রশাসনিকভাবে সবকিছু ম্যানেজ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ইতোপূর্বে একই মার্কেটের আরও দুই ব্যবসায়ী কবির ও আতিককে দুই বছরের ব্যবধানে ওই বন্ধুরাই কৌশলে মেরে ফেললেও তাদের কিছু হয়নি। এ কারণেই তারা সাদ্দামকেও মেরে ফেলার সাহস পেয়েছে। তবে এবারও তাদের কিছুই হবেনা। এলেঙ্গায় এ ধরণের কিশোরগ্যাং দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়।এরআতে শামছুল হক কলেজের এক শিক্ষার্থীও কিশোরগ্যাংয়ের হাতে প্রাণ হারায়।


    নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়া পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফ্লাইওভারের পাশে কেউ সাদ্দামকে ফেলে রেখে যায়। বিষয়টি জানার পর নয় মাইল এলাকায় গিয়ে দোকানদারদের সাথে তিনি কথা বলেন।


    দোকানদারদের বিষয়টি বলার পর তারা জানায়, এখানে একটা কাহিনী আছে। তিনটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন এসে বলেন- ‘আমাদের মোটরসাইকেল থেকে এক বন্ধু পড়ে গেছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না’। পরে সকলে মিলে সাদ্দামকে খোঁজাখুঁজি করে। স্থানীয়দের কাছে মোবাইল নম্বর দিয়ে সাদ্দামের খোঁজ পাওয়া গেলে তাদের মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলেন। 

    পরে তাদের নম্বর সংগ্রহ করে রাব্বী নামে এক বন্ধুকে ফোন করে সেথানে যেতে বলেন ওই কর্মকর্তা। তখন রাব্বি বলেন- ‘আমরা যমুনা সেতুর কাছে চলে আসছি’। কথা বলে ওই কর্মকর্তা বুঝতে পারেন, তারা সাদ্দামের দুর্ঘটনায় অনুতপ্ত নয়। বন্ধুদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করার পর তারা বলেন- ‘আমরা যমুনা সেতু পাড় হয়েছি। আর ফেরত আসতে পারবনা’। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন


    ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এটা যদি সত্যিকারার্থে সড়ক দুর্ঘটনা হত তাহলে তারা স্থানীয় থানাকে বা ৯৯৯ ফোন করে অবগত করত। সড়কের সিসি টিভির ফুটেজেও দুর্ঘটনার কোন দৃশ্য দেখা যায়নি। এটা এক্সিডেন্টের মতো মনে হয় না। এখানে কিছু একটা আছে। সাদ্দামের বন্ধুরা নাটক সাজিয়ে থাকতে পারে। সাদ্দামের স্ত্রী রুপা বেগম জানান, তিনি সাদ্দামকে ফোন দেওয়ার পর বলেন- রাব্বি ও লিসানদের সাথে ঘুরতে গিয়েছেন। তারপর বার বার ফোন দেওয়ার পরও সাদ্দামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার স্বামীকে ওর বন্ধু নামধারীরা হত্যা করেছে। ঘটনার পর রাব্বী, বাপ্পী, লিসান, সাব্বির কেউ ঠোন ধরেনি।


    পরে ওদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে যারা বিধবা করেছে ও তার ছেলেকে যারা এতিম করেছে তিনি তাদের ফাঁসি চান। সাদ্দামের মা জোৎন্সা বেগম জানান, লিসান ও রাব্বী তার ছেলে সাদ্দামের
    দোকানে ও তাদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত আসত। ওরাই তার ছেলেকে হত্যা করেছে। এক্সিডেণ্ট হলে শরীরে পোশাক থাকতো। কিন্তু সাদ্দাম বিবস্ত্র ছিল।


    পুরুসাঙ্গ কাটা ছিল। ঘার ও হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থলেও এক্সিডেন্টের কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ওরা দুর্ঘটনার নাটক করছে। তিনি ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। গালা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, এটা কখনোই সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারেনা। এটি হত্যাকান্ড বলে ধারণা করছেন এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করছেন।


    এ বিষয়ে বগুড়া জেলার শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, রোববার রাতে গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ডে ফ্লাইওভারের নিচে পুরুসাঙ্গ কাটা বিবস্ত্র অবস্থায় যুবকটিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


    আব্দুল ওয়াদুদ আরও জানান, যুবকটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় যুবকটির মৃত্যু হয়েছে না-কি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


    শেরপুর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) আলমগীর হোসাইন জানান, থানার ওসি বাবু কুমার সাহা সহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। থানায় সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


    র‌্যাব-১৪’র সিপিসি-৩ টাঙ্গাইল ক্যাম্পের অধিনায়ক রফিউদ্দিন মোহাম্মদ যোবায়ের জানান, যে কোন চাঞ্চল্যকর ঘটনারই র‌্যাব ছায়া তদন্ত করে থাকে। সে হিসেবে সাদ্দামের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনেও র‌্যাব ছায়া তদন্ত করছে। রহস্য উন্মোচিত করা গেলে বিস্তারিত জানানো হবে।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728